ফুরুশ ফুলের চারা
বর্ষার প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখা দৃষ্টিনন্দন ফুরুশ ফুলের গোলাপি, সাদা, লাল বা বেগুনি রংয়ের ছটা আমাদের অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমাদের দেশে অনেকেই ভুল করে একে চেরি ফুল নামে ডাকলেও ফুলটি আসলে ফুরুশ ফুল বা ছোট জারুল। বিদেশী এই ফুলটি মাত্র কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে আসলেও বর্ণবৈচিত্র্য, দীর্ঘ প্রস্ফুটন প্রক্রিয়া ও প্রাচুর্যের কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia indica এবং ইংরেজি নাম Crape myrtle বা Crepe myrtle. ফুলের কুঞ্চিত বা ভাঁজযুক্ত পাঁপড়ির কারণেই এমন নামকরণ। চীন,জাপান বা কোরিয়ান পেনিনসুলাতে জন্ম নেয়া এ অপরূপ সৌন্দর্যবর্ধনকারী উদ্ভিদটি ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই। আজকের ঢাকার সড়কদ্বীপ গুলিতেও অহরহ দেখা মেলে ফুরুশের।
গুল্মজাতীয় এই গাছ প্রায় ৪ মি পর্যন্ত উচু হতে পারে। শক্ত, ডালপালা ভরা, ঝোপালো ও পত্রমোচী গাছ। কান্ড বাদামী, মসৃণ। পাতার বিন্যাস একান্তর বা ঘূর্ণিত (৩টি পাতা), সবুজ, প্রান্ত মসৃণ, গোলাকার বা উপ-বৃত্তাকারএবং প্রজাতি ভেদে ছোট ও মাঝারী হয়। হেমন্তে পাতা হলুদ, কমলা বা লাল বর্ণ ধারণ করে। বসন্তের শুরুতে কচি সবুজ পাতা জন্মায়। বর্ষায় ডালের আগায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও শাখায়িত পুষ্পদন্ডে ছোট ছোট ফুলের বড় বড় থোকা হয়। ফুল সাধারণত গোলাপি, সাদা, বেগুনী, হালকা বা গাঢ় লাল বর্ণের হয়ে থাকে। ফুল ৩ সেমি চওড়া , পাপড়ি ৬টি, কুকড়ানো। এই ফুল গন্ধহীন হলেও সব রঙ নিয়ে চমৎকার বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা যায়। বিদেশি হলেও আমাদের দেশে এরা বেশ মানানসই। বংশবৃদ্ধির জন্য শিকড় থেকে গজানো চারা ও কলমই উত্তম। বসন্তে ছেটে দিলে নতুন ডালে প্রচুর ফুল ফোটে।
জারুল, ফুরুশ ও চেরি ফুলের পরিচয় এবং শনাক্তকরণ নিয়ে বৃক্ষপ্রেমীদের মাঝে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। একই পরিবার ভূক্ত জারুল, ফুরুশ, চেরি সহজে চিনতে পারবেন ফুলে নয়, পাতা ও বৃক্ষের আকার দেখে৷ সবচেয়ে সহজ পাতা দেখে৷ জারুলের পাতা বেশ বড় আকারের, কিছুটা কদম কিংবা আতার পাতার মতো, গাছ ও ফুল বড় ৷ ফুরুশ এর পাতা মাঝারি, অনেকটা বাউকুলের পাতা আকৃতির। গাছ ও ফুল মাঝারি সাইজের। চেরির পাতা অনেকটা আপেল কুল বা বরই পাতার মতো ছোট ছোট৷ ফুল ও গাছও ছোট আকৃতির৷
দ্রুত বর্ধনশীল ফুরুশ আদ্রতা যুক্ত মাটি এবং সূর্যালোকে ভালো জন্মে। কোন অঞ্চলে একবার অভিযোজিত হয়ে গেলে, খরা সহনশীলও হয়ে উঠে। ফুরুশের আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময় বর্ণের কারণে এর বিভিন্ন উচ্চতার, অধিক রোগপ্রতিরোধী ও অধিক পাঁপড়ি সমৃদ্ধ সঙ্কর প্রজাতির বিস্তৃতি এখন সর্বত্র। তন্মধ্যে Cherokee, Tuskegee, Miami, Seminole, Tuscarora, Potomac, Tonto ইত্যাদি অধিক বৈশিষ্ঠ্যসম্পন্ন ফুরুশের প্রজাতিগুলি উল্লেখযোগ্য।